আটাশ অক্টোবরে লগি বৈঠা বাহিনীর পাশবিকতার শিকার শহীদ হাবিবুর রহমান। তারা তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। লাশ নিয়ে সেই পুরনো খেলাও খেলেছে তাকে নিয়ে। প্রথমে তার লাশ গুম করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে নকল বাবাও সাজিয়ে এনেছিল। ৪ বছর হতে চললো, কিন্তু এ হত্যাকা-ের বিচার হওয়া তো দূরের থাক, পুরো মামলাটিই প্রত্যাহার করে নেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন হাবিবুর রহমানের বিধবা স্ত্রী আছিয়া বেগম। তার একটাই বক্তব্য প্রকাশ্য দিবালোকে যারা আমার স্বামীকে হত্যা করলো, আল্লাহ তাদের ছাড়বে না। ১ ছেলে আর ১ মেয়ে নিয়ে কেঁদে কেটে বুক ভাসান তিনি।
২৮ অক্টোবর লগি বৈঠা বাহিনী পৈশাচিক কায়দায় তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার লাশ গুম করে ফেলতে চেয়েছিল। হাসপাতালে নকল বাবা-মা সাজিয়ে লাশ ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাতে সফল না হয়ে পরবর্তীতে নিজেদের কর্মী দাবি করে পোস্টারও ছেপেছিল। লাশ নিয়ে জঘন্য রাজনীতি এর চেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ আর কী হতে পারে!
মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার নিবিড় পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ হাবিবুর রহমান মৃধা। পরবর্তীতে জীবিকার সন্ধানে চলে আসেন ঢাকায়। এসবের মাঝেও বেশি সময় ব্যস্ত থাকতেন মানুষকে কুরআন ও হাদীসের কথা বলার জন্য। মাত্র ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া হাবিবুর রহমান আয়ত্ত করেছিলেন কুরআন হাদীসের অনেক বিষয়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় তার নিকটাত্মীয় ও এলাকার লোকদের সাথে কথা বলে। তারা জানান, হাবিবুর রহমান আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের নিকট যখনই যেতেন তাদের সালামের দাওয়াত দিতেন। কুরআন হাদীস নিয়ে আলোচনা করতেন।
২৮ অক্টোবর তাকে লগি বৈঠা বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রথমে তারা হাবিবুর রহমানকে গুলী করে। তারপর লগিবৈঠা দিয়ে উল্লাসের সাথে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর তার লাশ দীর্ঘক্ষণ রাস্তার উপরে পড়ে থাকে। পরে তারা লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। পুলিশ উদ্ধার করে লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও চলে লাশ ছিনিয়ে নেয়ার নানা চেষ্টা। তার নাম মনির হোসেন এবং দলীয় কর্মী দাবি করে আওয়ামী লীগ।
স্বামীকে হারিয়ে ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছে আছিয়া বেগম। কান্নাই তার এখন একমাত্র সঙ্গি। হাবিবুর রহমানের বয়স হয়েছিল ৩৫ বছর। তার পিতা মৃত আবদুল মুকিম মৃধা। মাতা সাহেরা বেগম। তার গ্রামের বাড়ী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায় মৃধা কান্দি গ্রামে।